পুরো সংবাদ সম্মেলন যেন চাপা পড়ে গেল পিজন ডান্সের নিচে। এই নাচে ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাতকো দালিচ অসম্মান দেখলেও ব্রাজিলের কোচ বলছেন, ‘আমি নাচব। ’ তিনি নাচবেন, তবে তাঁর আগে মাঠে খেলোয়াড়দের নাচতে হবে।
তাঁদের নাচের বড় অনুষঙ্গ হলো গোল, সেটি না হলে নাচের সুযোগ কোথায়। বিশ্বকাপে গত ২০ বছরে নক আউটে কোনো ইউরোপীয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জয়ের রেকর্ড নেই ব্রাজিলের। এখানেই ক্রোয়েশিয়ার অনুপ্রেরণা এবং এটাই গতবারের রানার্স আপদের
স্বপ্ন দেখাচ্ছে সামনে এগোতে। দক্ষিণ কোরিয়ার ম্যাচ থেকেই বিশ্বকাপে পিজন ডান্সের সূত্রপাত। রিচার্লিসনের কবুতর নৃত্যে সতীর্থদের সঙ্গে যোগ দেন ব্রাজিলের কোচও। এরপর এই নৃত্যে আবিষ্কৃত হয় প্রতিপক্ষের প্রতি অসম্মান ও অশ্রদ্ধা।
গতকাল ক্রোয়েশিয়ান কোচও তাই বলে গেছেন। তবে তিতে বলেন অন্য কথা, ‘এটা (নাচ) হলো নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সংযোগের মাধ্যম। আমার বয়স ৬১ বছর, খেলোয়াড়রা হতে পারে আমার নাতির বয়সের। তাদের সঙ্গে আমার সেতুবন্ধ রচনা করতে হয়।
তাদের সঙ্গে আমি কাজ করি, তারা বোঝে। একইভাবে আমাকেও বুঝতে হবে তাদের। এ জন্য আমার যদি নাচ করতে হয়, আমি নাচব। আমি তাদের বলেছিলাম নাচে আমাকে লুকিয়ে রাখতে (হাসি)। আসলে এটা আমার কাজ নয়। ’ তার আসল কাজ
সেলেসাওদের স্বপ্ন দেখানো। রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি এবার বেশ চাপে। বিশ্বকাপ রাঙানোর শেষ সুযোগ তাঁর কাতারে। দুর্দান্ত ফরোয়ার্ড লাইনের সঙ্গে সৃষ্টিশীল মধ্যমাঠের যোগ আছে ব্রাজিল দলে। সেই তুলনায় রক্ষণভাগ বিশেষ করে দুই ফুলব্যাক পজিশনে দুর্বলতা আছে।
আক্রমণাত্মক ফুটবলের তোপে সেই দুর্বলতা ঢেকে ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছে দক্ষিণ কোরিয়ার জালে গোল উৎসব করে। কাতারে এটাই তাদের সেরা ম্যাচ। শুরুতে গোল পাওয়ায় ম্যাচটা প্রায় প্রথমার্ধেই শেষ করে দিয়েছিল চার গোল করে।
প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া হলে সেটা নিশ্চয়ই এমন দাপট থাকবে না ম্যাচে। ব্রাজিলের সহকারী ক্লেবর জাভিয়ারের চোখে প্রতিপক্ষ ত্রিশোর্ধ্ব হলেও অভিজ্ঞ, ‘আমাদের দলের সঙ্গে আছে রিকার্ডে গোমেজ, যার সার্বিয়ান ও ক্রোয়াট ফুটবলারদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে।
ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলের রেনেসাঁয়ও তার অবদান আছে। ক্রোয়েশিয়ার এই দলটি অনেক অভিজ্ঞ এবং অনেক খেলোয়াড়ের বয়স ত্রিশের বেশি। গত বিশ্বকাপের রানার্স আপ দলটি এবারও দারুণ খেলছে। আমি ভুল না করলে তাদের রক্ষণভাগ সবচেয়ে শক্তিশালী।
তাই গোলের জন্য আমাদের লড়াই করে যেতে হবে। এ রকম দলের বিপক্ষে শেষ দিকেও মিলতে পারে গোল। ’ তাদের রক্ষণভাগ আসলেই শক্তিশালী। এই রক্ষণ দুর্গ টপকে গোল পেতে হলে ফরোয়ার্ড লাইনে দক্ষতা লাগবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের। সেটা না পারলে
নিয়তি গিয়ে ঠেকবে টাইব্রেকারে। এখানেই তারা নিয়ে যেতে চাইবে প্রতিপক্ষকে। নক আউটের দুই ম্যাচে টাইব্রেকার জিতে ক্রোয়েশিয়া ফাইনালে উঠেছিল রাশিয়া বিশ্বকাপে। কাতারেও এই ধারা শুরু করেছে তারা শেষ ষোলোর ম্যাচে জাপানকে স্পটকিকে হারিয়ে।
এই ম্যাচেও তাদের কৌশল থাকতে পারে। ক্রোয়াট কোচ জ্লাতকো দালিচ অবশ্য এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে তাঁর ছেলেদের প্রশংসা করেছেন, ‘প্রতিটা ম্যাচে দলের সবাই পরিশ্রম করছে। ব্রাজিলের ম্যাচে দলে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। জাপান ম্যাচে চোট পাওয়া সোসাকে আজ (কাল)
ট্রেনিংয়ের দেখব, এরপর সিদ্ধান্ত নেব। ’ ট্রেনিং শেষে কোচ যে দলই চূড়ান্ত করুক সেটি ব্রাজিলের তরুণ দলের সঙ্গে কতটা লড়তে পারবে, সে নিয়ে সন্দেহ আছে। ব্রাজিল তারুণ্যে চমকাচ্ছে, ভিনিসিয়ুস-রিচার্লিসন-রাফিনিয়ারার যোগে শানিত হয়েছে আক্রমণভাগ।
ক্রোয়াট অধিনায়ক মদ্রিচও ঠারে-ঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই ম্যাচে এগিয়ে ব্রাজিল। কিন্তু সেলেসাওদের যে একটা ‘গেরো’ আছে। গত ২০ বছরে বিশ্বকাপের ইতিহাসে তারা নক আউটে হারাতে পারেনি কোনো ইউরোপীয় দলকে। অর্থাৎ সেই ২০০২ বিশ্বকাপের পর বারবার
ব্রাজিল আটকে গেছে ইউরোপীয় প্রতিপক্ষের কাছে।
আজ হতে পারে, নেইমারদের গেরো খোলার দিন। ব্রাজিলের বিপক্ষে জয়ের ইতিহাস নেই ক্রোয়েশিয়ার। বিশ্বকাপে গ্রুপ ম্যাচে দুইবারের দেখায় তারা হেরেছে। বাকি দুই ম্যাচের একটিতে জিতেছে ব্রাজিল, আরেকটি হয়েছে ড্র। সুতরাং ক্রোয়েশিয়া ইউরোপের দল হলেও আটকে যায় ব্রাজিলে গিয়ে।