নিঃসন্দেহে লেখার শুরুটা এভাবে করাই যেত, ‘এমবাপেকো গুসসা কিঁউ আতা হ্যায়?’ এবারের বিশ্বকাপে একটা জিনিস ভীষণভাবেই লক্ষ্য করছি। প্রত্যেক দেশের তারকা ফুটবলারের সঙ্গেই তাঁদের দেশজ মিডিয়ার সম্পর্কটা অহি-নকুলের।
বিশ্বকাপ চলাকালীন দেশজ মিডিয়াকে এড়িয়ে থাকতে চাইছেন তাঁরা। দোহায় পা দেওয়ার পর থেকে একবারও মিডিয়ার সামনে আসেননি নেইমার। আর বিশ্বকাপে মিডিয়াকে এড়িয়ে চলার তালিকায় প্রথম নামটা অবশ্যই এমবাপের। নেইমারের না
হয় চোট-সহ নানা কারণ রয়েছে। কিন্তু এমবাপে কেন এরকমন আচরণ করছেন? ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাইনালে গেলে এই বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলার হতে চলেছেন এমবাপে। এখনও পর্যন্ত দুটো ম্যাচ খেলে তিনটে গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার
তালিকাতেও রয়েছেন। তাহলে? এই অবস্থায় খুশি মনে সংবাদমাধ্যমের সামনে আসা উচিত। তাহলে কেন তিনি গোঁসা করে বসে আছেন? আল ওয়াকরাতে যেখানে রয়েছি, সেখানেই বেশ কিছু ফরাসি সাংবাদিকও আছেন। অতঃপর খোঁজ নিতে তাঁদের কাছেই যাওয়া।
তাঁদের মধ্যেই একজনের নাম ম্যাক। প্যারিসে থাকেন। পিএসজি কর্তৃপক্ষর সঙ্গে বেশ ভাল সম্পর্কও। মিডিয়ার উপর এমবাপের এই রাগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলছিলেন, ‘‘মিডিয়ার সঙ্গে ওর সমস্যাটা শুরু হয়েছে ইউরো কাপ থেকে। ফেভারিট দল হয়েও
হেরে যাওয়ার কারণ হিসেবে লেখা হয়েছিল, এমবাপের মারাত্মক ইগোর কথা। ওর মারাত্মক ইগোর জন্যই বেঞ্জেমার সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না দলের। এই লেখা ফ্রান্সের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরেই মিডিয়ার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে এমবাপে। এমনকী পিএসজির
ম্যাচের পরেও ও কথা বলে না।’’ পছন্দ নয় বলে মিডিয়ার থেকে দূরে থাকতে চান, এতদিন পর্যন্ত ব্যাপারটা ঠিকই ছিল। কিন্তু সমস্যায় পড়লেন কাতার বিশ্বকাপে এসে। গ্রুপ লিগের পর পর দুটো ম্যাচেই গোল করে ম্যাচের সেরা তিনি। আর বিশ্বকাপে ফিফার নিয়ম হল,
ম্যাচের পর কোচের সঙ্গে ম্যাচের সেরাকে সাংবাদিক সম্মেলনে আসতে হবে। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে গোল করে ম্যাচের সেরা হওয়ার পরেও তিনি কোচ দিদিয়ের দেশঁর সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে আসেননি। যা গর্হিত অপরাধ। সঙ্গে সঙ্গে এমবাপেকে নিয়ে সতর্ক করে ফ্রান্স ফুটবল
ফেডারেশনকে কড়া চিঠি পাঠায় ফিফা। জানিয়ে দেয়, এরকম অপরাধ ফের হলে এবার শাস্তির মুখে পড়বেন এমবাপে কিন্তু তারকারা আর কবে কার কথা শুনে চলেছেন? তারকারা চলেন নিজেদের ইচ্ছেমতো। ছোটবেলায় নিজের সারা ঘরে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর
ছবি সাজিয়ে রাখতেন এমবাপে। পর্তুগিজ তারকা ছিলেন তাঁর স্বপ্নের নায়ক। আর দেখুন, বিশ্বফুটবল থেকে রোনাল্ডোর প্রস্থানের সময় ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলতে শুরু করেছেন, রোনাল্ডো চলে যাচ্ছেন। রেখে যাচ্ছেন এমবাপেকে। আর তাই হয়তো রোনাল্ডোর মতোই ডাকাবুকো,
কারও কথায় চলার বান্দা নন তিনি। নাহলে শাস্তি হবে জানিয়ে ফিফার তরফে এরকম কড়া সতর্কতামূলক চিঠি আসার পরেও নিজেকে বদলাবেন না তিনি? নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ ডেনমার্কের বিরুদ্ধেও করলেন ২ গোল। স্বাভাবিক কারণেই ম্যাচের সেরা। ফ্রান্সের টিম
ম্যানেজমেন্ট অনেক অনুরোধ করেও এমবাপেকে পাঠাতে পারল না সাংবাদিক সম্মেলনে। কোচ দিদিয়ের দেশঁ অনেক অনুরোধ করেছিলেন, সংবাদমাধ্যমের উপর থেকে রাগ কমানোর জন্য। কিন্তু তাঁর পরিষ্কার যুক্তি। মাঠের ভিতর কোচের পরামর্শ অবশ্যই শুনবেন।
কিন্তু মাঠের বাইরে তাঁর জীবন চলবে তাঁরই সিদ্ধান্তে। অতএব ম্যাচের পর গোঁসা করে বসে রইলেন ড্রেসিংরুমে। এলেন না সাংবাদিক সম্মেলনে। আর এতেই চটেছে ফিফা। ফিফার নিয়মভঙ্গ করার জন্য বড় আর্থিক জরিমানা করা হবে এমবাপেকে। সিদ্ধান্ত জেনেও
নির্বিকার এমবাপে। দাঁড়ান, এখানেই শেষ নয়। মিডিয়ার উপর এমবাপের রাগের আরও একটা কারণ শোনা গেল। এই মুহূর্তে নিজের ক্লাব পিএসজির সঙ্গে নাকি এমবাপের সম্পর্ক একদমই তলানিতে। এমবাপে সামনের মরশুমে দল ছাড়ছেন, একদম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।
পাশাপাশি ইপিএলে খেলার জন্য লিভারপুলের সঙ্গে নাকি কথাবার্তা একদমই পাকা। এই খবরও জানতে বাকি নেই ফ্রান্সের সংবাদ মাধ্যমের। ফলে যে মুহূর্তে তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে আসবেন, পিএসজি ছাড়া নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করে বিব্রত করতে পারেন সাংবাদিকরা। ফলে একটা
বিরক্তিকর পরিস্থিতির সামনে পড়ে যেতে পারেন তিনি। যেহেতেু বিশ্বকাপে ঠিকঠাক ফর্মে রয়েছেন, তাই তিনি চাইছেন না, এই মুহূর্তে তাঁকে কেউ পিএসজির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে জিজ্ঞাসা করুক। সেই কারণেই ফিফার জরিমানা সামলানো তবুও ঠিক আছে। কিন্তু মিডিয়ার সামনে আসবেন না তিনি।