দেশের ক্রিকেটে মিরাজের আগমনের সময় বলা হচ্ছিল এই ক্রিকেটারটি হবে ভবিষ্যতের সাকিব। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের মাধ্যমে লাইমলাইটে আসা মিরাজের মধ্যে পরবর্তী সাকিব হওয়ার সব আলামতই ছিল।
২০১৬ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন এই ক্রিকেটার। দলের মূল অফ স্পিনার এবং মিডল অডারে দলের মূল ব্যাটসম্যান ছিলেন এই ক্রিকেটার। অর্থাৎ বাংলাদেশ দলে যে ভূমিকাটি পালন করছেন সাকিব সেটি অনূর্ধ্ব ১৯ দলের জন্য
মিরাজ করছিলেন। সেই বছরই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের জন্য দলে ডাকা হয় মিরাজকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচও খেলে ফেলেন মিরাজ। পরবর্তীতে সেই সিরিজে মিরাজের পারফরমেন্স যা ছিল তা ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে রয়েছে।
২ টেস্টে সবমিলিয়ে উনিশ উইকেট শিকার করেছিলেন এই অফ স্পিনার। হয়েছিলেন ম্যান অফ দা সিরিজও। দুর্দান্ত এই অলরাউন্ডার জাতীয় দলে এসে হঠাৎই শুধু বোলারে পরিণত হয়ে গেলেন। বলা হচ্ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঠিকমতো নিজের ব্যাটিং প্রতিভাকে
কাজে লাগাতে পারছিলেন না মিরাজ। তবে বাস্তবে মিরাজকে সেই সুযোগটিই করে দিচ্ছিল না টিম ম্যানেজমেন্ট। টপ অর্ডারে একের পর এক ব্যাটসম্যান ব্যর্থ হলেও তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হয়। সেখানে মিরাজ কে শুধুই বোলার হিসেবে চিন্তা করে প্রথমদিকে
৯ নম্বরেও ব্যাটিং করানো হয়েছিল। অর্থাৎ মিরাজের ব্যাটিং প্রতিভাকে ঠিকমতো খেয়ালই করেননি টিম ম্যানেজমেন্ট। এক্ষেত্রে টিম ম্যানেজমেন্টের দূরদর্শিতার অভাবই দায়। তবে ২০২১ সালে উইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে সেঞ্চুরি করে সবাইকে তাক
লাগিয়ে দেয় মিরাজ। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে মিরাজের ব্যাটিং প্রতিভা সামনে আসতে থাকে। এ বছরের শুরুতে আফগানদের বিপক্ষে ৪৯ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে টাইগাররা, সেই পরিস্থিতি মিরাজ এবং আফিফ দলকে পুনরুদ্ধার করেন এবং ২১৬ রানের
লক্ষ্য তাড়া করে ম্যাচও জেতান। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে যা করেছিলেন তা তো এখনো চোখে ভেসে আছে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ম্যাচে তো করে ফেললেন নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিই। এ সবগুলো ইনিংসে মিরাজ খেলতে পেরেছিলেন কারণ উপরের
দিকের ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হয়েছিল। যদি কোনো কারণে টপ অর্ডার রান পেতো তাহলে হয়তো সুযোগই পেতেন না মিরাজ। এখন কি সময় আসেনি মিরাজকে চার কিংবা পাঁচে ব্যাটিং করানোর? অফ ফর্মে থাকা মুশফিকের তুলনায় এখনের মিরাজের ব্যাটিং খুব সম্ভবত এগিয়ে থাকবে।
সেক্ষেত্রে দলের স্বার্থের কথা চিন্তা করা হলে মিরাজকেই উপরে খেলানো যৌক্তিক। তবে বাংলাদেশে যৌক্তিক জিনিসগুলোই হতে দেখা যায় না। ম্যাচের পর ম্যাচ অসস্তিতে ব্যাটিং করার পরও পাঁচ নম্বর পজিশনটা হয়তো মুশফিকই ধরে রাখবে।
সেরা সময় এখন তরুণদের উপরের পজিশন দিয়ে দেওয়ার। আফিফ ও নাম্বার ৭ ব্যাটসম্যান নয় ফলে আফিফকেও উপরে ব্যাটিং করানোটাই দলের জন্য বেশি ফলপ্রসূ। সব মিলিয়ে ২০২৩ বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে।
মিরাজকে মিডল অডারে ব্যাটিং করানো যার মধ্যে একটি। এই ম্যাচে একটি রেকর্ড গড়ে সাকিব আল হাসানের পাশে নিজের নাম লিখিয়েছেন মিরাজ। বাংলাদেশের হয়ে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং
দুই কিংবা ২ এর চেয়ে অধিক উইকেট শুধু এই দুই জনই নিয়েছেন। পারফরম্যান্স দিয়ে তো ইতিমধ্যে সাকিবের পাশে নাম লিখেছেন মিরাজ। পরবর্তী সাকিব হওয়ার পথটুকু সহজ করবে তো ম্যানেজমেন্ট?