বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন

নবীনগরে ৫ দিনের নির্দেশনায় ৩ মাসেও উদ্ধার হয়নি খাল

প্রতিনিধির নাম / ৬৯ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩

মোঃ আলমগীর হোসেন, প্রতিদিনের পোস্ট: ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়ন ভূমি নায়েব ও উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নিয়ে ম্যানেজ হওয়ায় ৫ দিনের নির্দেশনা থাকা খাল উদ্ধার হয়নি ৩ মাসে এমন অভিযোগ উঠেছে।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ইব্রাহীমপুর ০৯ নং ওয়াডের মালুর বাড়ির ব্রীজ সংলগ্ন ৩৯ ফুট প্রসস্থ গরু মরার খালটি বালু দিয়ে ভরাটের মাধ্যমে স্থায়ী স্থাপনা দালান ঘর নির্মাণ করে অবৈধভাবে দখলে নেয় ভূমিদস্যু অলি মিয়া, লিল মিয়া, রহমত আলী গংরা। ঐ খালের আশেপাশে থাকা ৩০ একর ফসলি জমির পানি চলাচল সহ জলাবদ্ধতা নিরসনে খালটি উদ্ধার করতে ১২ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১৪ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীনগর ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি নবীনগর বরাবর গত ৩১ জানুয়ারি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এমদাদুল হক গং। এরই ভিত্তিতে নবীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মাহমুদা জাহান খাল উদ্ধার করতে গিয়ে ভূমিদূস্য অলি গংদের নিজ নিজ দায়িত্বে খাল অবমুক্ত করতে মুচলেকা নেয়া সহ ৫ দিন সময় নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু জনশ্রুতি রয়েছে ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জাকির হোসেন ও নবীনগর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ হওয়ায় ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি নবীনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি মাহমুদা জাহান। এতে করে ভোক্তভোগী সাধারণ কৃষকের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসনের প্রতি। এই খালটি দক্ষিণ ও উত্তর পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উত্তরে বাঁশবাজার হয়ে যমুনা নদীতে সংযুক্ত হওয়া সহ দক্ষিণ পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কাঁঠালিয়া ভেতর দিয়ে রছুল্লাবাদ অংশের যমুনা নদীতে সংযুক্ত হয়েছে। খালটি ভরাটের ফলে চাষাবাদ নষ্ট হওয়া সহ অল্প বৃষ্টিতে সৃষ্টি হচ্ছে জলবদ্ধতা।

এবিষয়ে কৃষক নজিব খান জানায়, পাকিস্তান আমলের আমাদের গরু মরার খালটি অলি মিয়া, লিল মিয়া, রহমত আলী বালু দিয়ে ভরাট করে দালান ঘর নির্মাণ করায় অভিযোগ করলে এসিল্যান্ড এসে ৫ দিনের মধ্যে খাল থেকে বালু সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয় কিন্তু ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও বালু সরিয়ে নেয়নি তারা। একজন এসিল্যান্ড বলার পরও যদি ৩ মাসে বালু সরিয়ে না নেয় তাহলে আমরা সাধারণ মানুষ যাব কোথায়। শুধু খালের এই স্থানটি নয় পশ্চিম পাশে গজারিয়ার খালের সংযুক্ত স্থানের আগেও আরো ৪ পাঁচটি বাঁধ দিয়ে আমাদের আবাদি জমির পানি চলাচল বন্ধ করে রেখেছে এসব ভূমিদস্যুরা।

অপর এক কৃষক আব্দুর রশিদ খন্দকার জানায়, মালুর বাড়ির ব্রীজ সংলগ্ন খালটি দিয়ে আমাদের জমিতে বর্ষা মৌসুমে পানি আসত আর শুকানো মৌসুমে পানি নিচে নেমে যেত কিন্তু খালটি ভরাট করে ফেলায় পানি না আসায় আমাদের জমিগুলো অনাবাদি থেকে যাচ্ছে এবং অল্প বৃষ্টিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবর অভিযোগ করা ব্যক্তিদের মধ্যে থাকা একজন এমদাদুল হক জানান, আমাদের বাড়ির পাশে থাকা খালটি ভরাট করে দালান ঘর নির্মাণ করে কৃষি জমির পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় আমরা প্রথমে এসিল্যান্ড বরাবর লিখিত অভিযোগ করি,এতে প্রতিকার না পেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীনগর বরাবর অভিযোগ করলে এসিল্যান্ড নবীনগর ব্যবস্থা নিয়ে ৫ দিনের মধ্যে খাল থেকে বালু সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়। পরবর্তীতে ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব জাকির হোসেন ও উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম মোটা অংকের টাকা খেয়ে খালে থাকা অলি মিয়াদের বিল্ডিং বাঁচাতে ২ ফুট জায়গা ছেড়ে লাল নিশান টাঙ্গিয়ে সরকারি খাল সনাক্ত করে। কিন্তু এসিল্যান্ডের ৫ দিনের নির্দেশনা ৩ মাসেও বাস্তবায়ন করেনি তারা। এমনকি সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম সরকারি খাল মাপার জন্য আমার কাছ থেকেও ৫ হাজার টাকা নিয়েছে।

সরকারি খালটের জায়গা অবৈধভাবে দখল করা অলি মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি এবং মুঠোফোনে ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়।

ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জাকির হোসেনের বক্তব্য নিতে তার অফিসে গেলে তিনি বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলামকে তার মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনিও বক্তব্য দিতে পারবে না বলে জানায়, এ বিষয়ে স্যার সবকিছু বলবে।

এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মাহমুদা জাহান জানান,বিষয়টি উভয় পক্ষকে ডেকে খুব দ্রুত সমাধান করে দেয়া হবে, নায়েব ও সার্ভেয়ার যদি টাকা পয়সা নিয়ে থাকে তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে পারলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!