ঢাকাসোমবার , ১৮ অক্টোবর ২০২১
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কালিয়াকৈর উপজেলা
  5. কিশোরগঞ্জ
  6. কুমিল্লা
  7. কুলিয়ারচর উপজেলা
  8. খুলনা
  9. খেলাধুলা
  10. গাজীপুর
  11. চট্টগ্রাম
  12. জাতীয়
  13. ঢাকা
  14. তথ্য প্রযুক্তি
  15. দিনাজপুর জেলা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মা || রুস্তম আলী

মা || রুস্তম আলী
অক্টোবর ১৮, ২০২১ ৪:২০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মা || রুস্তম আলী। ছেলেটা সেই সকালে বেরিয়েছে এখনও ঘরে ফিরেনি। মা শফিউন্নেসা ছেলে মাহফুজের প্রতীক্ষায় থেকে তটস্থ হয়ে আশেপাশের প্রতিবেশি বাড়িগুলিতে অনুসন্ধান করে কোথাও তার দৃষ্টি মেলেনি। তাই সে মাহফুজের প্রতি অত্যন্ত ক্রদ্ধান্বিত হয়ে ঘরে ফিরলে তাকে মারার দৃঢ় সংকল্প করল মনে মনে।

মাহফুজ আট বছরের বালক। ক্লাস চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। এই বয়সেই তাকে পড়শোনার ফাঁকে দুটো ছাগল চরাতে হয়, একটি গোরু বাড়িতে তার মাঠে ঘাস কাটতে যেতে হয়। গ্রামের আর পাঁচজন ছেলের মত পড়াশোনার ফাঁকে খেলাধূলা করার সুযোগ নেই তার। কেননা তাদের মাত্র একবিঘা চাষের জমি। গ্রামে বড় গৃহস্থ নেই বলে ক্ষেত মজুরের কাজ হয়না বাবার। তাই গৃহপালিত পশু ছাগল গোরু পুষে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করে।

সেদিন মাহফুজ তার গ্রামে বেরিয়ে বন্ধুদের সাথে খেলাধূলায় মত্ত হয়ে ছাগল চরানো, স্কুলে যাওয়া সব এড়িয়ে যায়। সে সকালে বাড়ি থেকে না খেয়ে বেরিয়ে সারাদিন ধরে খেলাধূলা করে অপরাহ্নে বাড়ি ফিরল। মা সফিউন্নেসা সেই রাগে তাকে পেয়ে কঞ্চি দিয়ে কয়েকটা প্রহার করল। মাহফুজ প্রহার খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে পালিয়ে গেল ফের গ্রামের দিকে। মায়ের মারের ভয়ে সে আর ঘরে ফিরল না। আস্তে আস্তে সূর্যের প্রখর রৌদ্র ঝিমিয়ে দিবার অবসান হল। নেমে এল সন্ধ্যা। ক্রমশঃ আঁধার ঘণিয়ে রাত্রি গভীর হল। থেমে গেল পাখির কোলাহল। বালক বালিকার খেলাধূলা হৈ চৈ চেচামেচি। বন্ধ হল গ্রামের দোকানপাট। যে যার ঘরে ফিরে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমিয়ে গেল বিভোর ঘুমে।

জনশূন্য পথঘাট, মাঠ-প্রান্তর সবই। নিঃশব্দ চারিধারে, মাঝে মাঝে কেবল শোনা যায় ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। মাহফুজ কেবল একা জেগে বৃহৎ বট বৃক্ষের তলায়। সে মারের ভয়ে আর ঘরে ফিরেনি, সারাদিন খাওয়া নেই তার। ক্ষুধায় পেট জ্বলে। সারাদিন সে কিছু খাইনি কিন্তু এই সন্ধ্যেবেলায় ঝাঁকের ঝাঁক মশারা তাকে খাওয়ার জন্য চরম উৎপাত শুরু করেছে। ঘুমোতে চাই মাহফুজ কিন্তু ঘুম আসেনা। রাত্রি জেগে জেগে দেখে কেবল তারাদের মিটিমিটি আলোর নীরবতা দেখে।

এইভাবে রাত্রি অতিবাহিত হতে হতে গাছে সহসা ডেকে উঠল লক্ষী পেঁচা। মাহফুজ পেঁচার ডাকে আৎকে উঠে সহসা ভয় পেয়ে গেল। সে আর বট বৃক্ষের তলায় থাকার সাহস রাখলনা, ভয়ে ভয়ে চুপি চুপি বাড়ির অভিমুখে রওনা হল। বাড়িতে গিয়ে দেখল মা তার বড় বোনটাকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেছে ঘরের ভিতরে। আর তার বাবা হকসেদ ঘুমিয়ে দাওয়াই। সে তার বাবার পাশে ঘুমিয়ে গেল।
বাবা রাতের শেষে বাড়ির কেউ জাগার আগে মাহফুজকে নিয়ে মাঠে চলে গেল। মাহফুজ মাঠে বাবার সাথে গিয়ে উদিত প্রভাতের
সোনালী সূর্যের আলো হারিয়ে বেলা গড়িয়ে প্রখররৌদ্রের অস্বস্তিতে আর ক্ষুধায় শরীর একেবারে ঝিমিয়ে গেছে। তাই সে কাজ করতে করতে ধৈর্যের বাঁধ অতিক্রম করে দৈবাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদেে উঠে বাবার সামনে।

তারপর গতকালের মায়ের হাতের মার খাওয়া, সারাদিন না খেয়ে থাকার কথা সব শুনল বাবা তার মুখে। শুনে পুত্র মাহফুজের প্রতি যেমন সহানুভূতি বাড়ল তেমনি তার স্ত্রীর প্রতি ভীষণ ক্রোধ হল। তাই সে বাড়িতে এসে স্ত্রীকে প্রহার করে তালাক দেব বলে বাড়ি থেকে বের করে দিল।

স্ত্রী শফিউন্নেসা তার বাবার বাড়ি যেতে বাধ্য হল। সফিউন্নেসা বাবার বাড়ি চলে যাওয়ার পর হকসেদের সংসারের কষ্ট আরও বেড়ে গেল। রান্নাবান্না করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খাইয়ে দাইয়ে স্কুলে পাঠানো বাড়িঘর দেখাশোনা নিয়ে চরম
অসুবিধা হতে লাগল। তবুও সে স্ত্রীকে আনতে চাইল না তালাক, দেওয়ার সিদ্ধান্তই বহাল রাখল। এমতবস্থায় দু’মাস গড়িয়ে গেল মাহফুজ অসুস্থ হয়ে চলাফেরার অক্ষমতায় শয্যাগত হয়ে গেল।

ভালো চিকিৎসকের কাছে গিয়েও অসুখের কোনও পরিবর্তন হলনা। এই অসুস্থতার দুঃসংবাদ আস্তে আস্তে গ্রামে সবাই শুনতে পেল। শুনে ছেলেমেয়ে ছোট বড় গ্রামের অনেকেই দেখতে আসে। কিন্তু আসে না তার জন্মদাত্রী মা। আর তাকে কোনও খবরও কেউ দেয়না। এদিকে মাহফুজ শয্যাগত অবস্থায় তার মুখে একটাই শব্দ ‘মা।’ হকসেদ তার অসুস্থ মাহফুজের কাছে যতবার এসেছে আর পাশে বসেছে কখন মাহফুজের মুখে ভুল করে বারেক বাবা শব্দ উচচারিত হয়নি

প্রতিবারই মুখে “মা ডেকেছে।” পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্ত্রী শফিউন্নেসার কাছে গেল হকসেদ। তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইল আর মাহফুজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে বলল, “মাহফুজ বারবার মা বলে ডাকছে তোমাকে ভুল করেও তার মুখে বাবা ডাক বারেক শুনিনি।

তাই এখন বুঝেছি আমার থেকে সন্তানের প্রতি তোমার মমতায় বেশি। আমি না বুঝে অজ্ঞের মত তোমার প্রতি অবিচার
করেছি। আমি তোমাকে আর তালাক দিতে চাইনা তুমি ফিরে চল।” শফিউন্নেসা এই কথা শোনা মাত্র তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে পড়ল স্বামীর সাথে। বাড়িতে ঢুকে শফিউন্নেসা মাহফুজের কাছে প্রবেশ করতেই মাহফুজ মা বলে বিছানা থেকে উঠে বসল। তারপর ডাক্তারের সুচিকিৎসা আর মায়ের আদর যত্ন পেয়ে অত্যাল্পকালের মধ্যে সুস্থ হয়ে গেল।

প্রতিদিনের পোস্ট পোর্টালে নিজস্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট ও সোর্স থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সুত্রসহ প্রকাশ করা হয়। তাই কোনো খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।