বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন

সয়াবিনের আকাশছোঁয়ার রহস্য উন্মোচন হলো

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, প্রতিদিনের পোস্ট / ৫৩ বার
আপডেট : রবিবার, ৬ মার্চ, ২০২২
সয়াবিনের_আকাশছোঁয়ার_রহস্য_উন্মোচন_হলো

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, প্রতিদিনের পোস্ট: বৈশ্বিক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অযুহাতে সয়াবিন তেলের দাম হটাৎ বেড়ে যায়।

প্রতি লিটার তেল ক্রয় করতে হচ্ছে ২০০ টাকা ধরে। এতে করে ক্রয় সীমার বাহিরে চলে গেছে নিন্মমধ্য ও নিন্মবিত্ত পরিবার। তবে, বেরিয়ে এলো তেলের হটাৎ আকাশছোঁয়ার রহস্য।

বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি ও রাজধানীর মৌলভীবাজারের বড় তেল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ভুট্টো বলেন, ‘ সয়াবিন তেল নেই মৌলভীবাজারে। তেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে সব কোম্পানি মিল থেকে। এমন কি তেল সরবরাহ করছেনা নিজস্ব ডিস্ট্রিবিউশন সেল থেকেও। এ কারণে বর্তমানে খুচরা ও বোতলজাত উভয় তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।’

কোম্পানি সয়াবিন তেল সরবরাহ না করার কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, ‘তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছে। মেঘনা গ্রুপ বলছে, জাহাজ বন্দরে এখনো পৌঁছেনি। বাড়তি চাপের কথা জানিয়েছে সিটি গ্রুপ। টিকে গ্রুপসহ অন্যরা তাদের কাছে সয়াবিন নেই বলে জানাচ্ছে।’

সয়াবিন তেল মিলছেনা রাজধানীর অনেক মুদি দোকানে। সয়াবিন তেল যেসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে, তাও আবার চড়া দামে ক্রয় করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সুযোগ বুঝে বিক্রেতারাও ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন।

এ ঘটনা শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারেও সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে অনেক দোকানে এখন প্রতি লিটার তেলের দাম রাখা হচ্ছে ২০০ টাকা পর্যন্ত।

ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি তেলের বাজার মৌলভীবাজারেও দেখা দিয়েছে তেলের সংকট। সেখানে তেল কিনতে গিয়ে ফিরে আসছেন খুচরা ক্রেতারা। আবার যাদের কাছে সয়াবিন তেল মুজুদ রয়েছে সেটা গোপনে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

পাইকারি বিক্রেতাদের অভিযোগ, তেল দিচ্ছে না সয়াবিন সরবরাহকারী কোনো প্রতিষ্ঠান। ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) ওঠাতে পারছেন না তারা। কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ বন্ধ রাখায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

তবে দেশে সয়াবিন তেল সরবরাহকারী বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা আগের মতো প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল সরবরাহ করছে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা রমজান সামনে রেখে সয়াবিন মজুত করছেন। এজন্য বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে।

তবে মেঘনা ও সিটি গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন উল্টো কথা। তাদের দাবি, মিল থেকে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। আমাদের এখানে কোনো সংকট নেই। রমজান সামনে রেখে পাইকারি বিক্রেতারা মজুত করছেন সয়াবিন তেল, ফলে বর্তমান বাজারে চলছে তেলের সংকট।

সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘আমাদের কাছে তো তেল রয়েছে। প্রতিদিন মিলগেট থেকে দুই হাজার টন তেল সরবরাহ করছি। আগেও একই পরিমাণ তেল ডেলিভারি দেওয়া হতো। এটা কন্টিনিউ (অব্যাহত) রয়েছে, সংকট তো এখানে না।’

ডিস্ট্রিবিউশন সেল থেকে তেল দেওয়া হচ্ছে না, পাইকারি ক্রেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোথাও তেলের কোনো সংকট নেই। সবকিছু আগের মতোই চলছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেঘনা গ্রুপের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ‘সয়াবিনের সংকট’ নেই বলে দাবি করছেন। তিনি বলেন, ‘পাইকারি ব্যবসায়ীরা রমজানের আগে সয়াবিন মজুত করছেন। সংকটটা আসলে সেই কারণে সৃষ্টি হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ কৃত্রিম সংকট। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট এটা করছে। তারা রোজার আগে বাজার অস্থিতিশীল করতে চায়।’

এদিকে বুধবার (২ মার্চ) রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানি জানান, সয়াবিন তেল নেই। সেগুনবাগিচা বাজারের সিটি করপোরেশন কমপ্লেক্সের মধ্যে ৭-৮টি দোকানে তেল বিক্রি হয়। সেখানে আজ একটি দোকানে খোলা সুপার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে। এই সুপার সয়াবিন লিটারপ্রতি ১৮০ টাকা। অন্য দু-একটি দোকানে বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা লিটার।

সাদ্দাম জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন বলেন, ‘কোম্পানি মাল (তেল) দেয় না। বাজারে সয়াবিনের কোনো কোম্পানির গাড়ি আজ এখনো আসেনি। সকালে ফ্রেশ তেলের এক এসআর (বিক্রয় প্রতিনিধি) এসেছিলেন। তিনি জানিয়ে গেলেন, সয়াবিন নেই।’

মুহিন জেনারেল স্টোরে বিক্রি হচ্ছে সুপার সয়াবিন। দোকানের বিক্রেতা নীরব হোসেন বলেন, ‘এ তেল (সুপার সয়াবিন) ১৭০ টাকা লিটার কেনা পড়ছে। আমরা রাজধানীর মৌলভীবাজার থেকে এ দামে কিনেছি। সেটা ১৭৫-১৮০ টাকায় বিক্রি করছি।’

সেগুনবাগিচা বাজারের সিটি করপোরেশন কমপ্লেক্সের কিছুটা দূরে আগোরার সুপারশপ রয়েছে। সেখানে সয়াবিনের কোনো সংকট নেই। তবে ক্রেতারা বেশি বেশি কেনায় তারা চাপে পড়ছেন।

সুপারশপের ফ্লোর সুপারভাইজার উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘বাইরের দোকানে সয়াবিন না পেয়ে অনেকে সুপারশপে আসছেন। অধিকাংশ ক্রেতা কয়েক বোতল করে সয়াবিন কিনছেন। ফলে বাড়তি একটা চাপ পড়ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও সয়াবিনের লিটার ছিল ১১০ টাকা। সেটা এখন দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। সয়াবিনের বাজারে এমন অস্থিরতায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।

মিল মালিক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে নিয়ে মাথাব্যথা নেই ভোক্তাদের। তাদের অভিযোগ, সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের পকেট কাটছেন।

সফিউজ্জামান নামের এক ক্রেতা বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের বাইরে কোম্পানি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছেন। দু-এক টাকা করে বাড়াতে বাড়াতে দামটা এখন অস্বাভাবিক করে ফেলেছেন। জনগণকে বোকা বানাতে মাঝে মধ্যে সরকারের মন্ত্রীরা হুমকি-ধামকি দেন। কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।’

ফারুক আহম্মেদ নামে আরেকজন বলেন, ‘কদিন আগে আন্তর্জাতিক বাজারের হিসাব-নিকাশ দেখিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। এবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাজার অস্থিতিশীল বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব আমাদের সয়ে গেছে। এখন সবচেয়ে ভালো হয়, না খেয়ে থাকার অভ্যাস করা।’

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ন বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হিমেল/নরসিংদী জার্নাল


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!